আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় হাবীব রসূল (সাঃ) কে মেরাজ রজনীতে নিজের কাজে ডেকে নিলেন । সাক্ষাত শেষে বিদায় বেলায় আল্লাহ্, রসূল (সাঃ) কে এক অনন্য উপহার দিলেন । রবের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের যে অনন্য সূধা আস্বাদন করলেন রসূল (সাঃ); তার কিছুটা যেন উম্মতে মুহাম্মদ উপভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিলেন আল্লাহ্ । রবের সাথে বান্দার আত্মিক যোগাযোগের সর্বোউত্তম এক পন্থা উপহার নিয়ে এলেন আমাদের রসূল (সাঃ) । রবের সাথে বান্দার এই যোগাযোগ বা কথোপকথনের পন্থা হলো সালাহ্ বা নামায । দৈনিক ৫ বার এই কথোপকথন প্রত্যেক উম্মতে মুহাম্মদের জন্য ফরয করা হয়েছে । রসূল (সাঃ) আমাদের দেখিয়ে গেছেন রবের সাথে কিভাবে আমরা এই যোগাযোগ স্থাপন করবো । তবে আমরা কি কখনও যাচাই করে দেখেছি আমাদের এই কথোপকথন কিংবা যোগাযোগটা কি আত্মিক হচ্ছে, নাকি শুধুই বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা ? রবের সাথে নামাযের মাধ্যমে কী কথা বলছি, তা কি আমরা সবাই জানি? এই অর্থ না জেনে নামায পড়া কি কখনও অর্থবহ হবে; রবের সাথে আমাদের বন্ধন কি সুদৃঢ় করবে?
একাধিক ভাষায় দখল না থাকলে আমরা দেখি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ তাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় দুভাষী ব্যবহার করেন । যদিও এতে আলোচনা চালিয়ে নেয়া যায় তবুও কি এখানে আন্তরিকতার স্বাদ পাওয়া যায় ? আর যদি এখানে কোন দুভাষী না থাকে ? কেমন হবে ব্যাপারটা ? ইশারা ইঙ্গিত করে কি কোন যোগাযোগ স্থাপিত হবে ?
আল্লাহ্ বলেন-
তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের কাছে যেও না; যতক্ষণ না তোমরা যা বলছো তা বুঝতে পারো । [নিসা ৪:৪৩]
মদপান নিষিদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে আয়াতটি নাজিল হয়েছিল । তবে মদপানকে নিষিদ্ধ করার জন্য নাজিল হলেও আয়াতটি আমাদের আরও একটা গুরুত্বপুর্ন বার্তা দেয় । আর তা হলো নামাযে আমরা কী বলছি তা বুঝে বলা । একটু চিন্তা করুন … দিনের পর দিন আমরা তো অর্থ না বুঝে শুধু মুখস্ত করা কয়েকটা আরবি বাক্য দিয়েই আমাদের নামায আদায় করছি । মদপান না করেও আমরা যেন নেশাগ্রস্তের মত নামায পড়ছি !!
তাই চলুন নামাযটাকে আরও একটু অর্থবহ করি; যেন রবের কাছে আমাদের আর্জি গুলো আরও আন্তরিকভাবে পেশ করতে পারি । চলুন জানি নামাযে আমরা প্রতিদিন কী কথা বলছি আল্লাহ্র সাথে । তাই চলুন নামাযটাকে আরও একটু অর্থবহ করি; যেন রবের কাছে আমাদের আর্জি গুলো আরও আন্তরিকভাবে পেশ করতে পারি । চলুন জানি নামাযে আমরা প্রতিদিন কী কথা বলছি আল্লাহ্র সাথে । নামাযে মূলত আমরা আমাদের আর্জি পেশ করার আগে আল্লাহ্র বড়ত্ব, মহিমা, প্রশংসা এবং পবিত্রতা (তাসবিহ্) বর্ণনা দিয়ে শুরু করি । যেমনি ভাবে একজন প্রজা কোন আবদার নিয়ে বাদশাহের কাছে গেলে প্রথমে তার মহত্ত্ব, দয়া বা প্রশংসা দিয়েই শুরু করে । যাহোক, আমরা নামায শুরু করি আল্লাহু আকবার অর্থাৎ আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ বলে । এখানে 'আকবার' শব্দটি এসেছে 'কাবির' =বড় [কবীরা গুনাহ্ (বড় গুনাহ্) শব্দটিতো আমরা জানি] শব্দ থেকে ।
প্রয়োজনীয় কিছু শব্দ
নামাযের বিভিন্ন রূকনগুলোতে আমরা কী বলি তা জানতে এবং মনে রাখতে আমাদের কিছু আরবি শব্দ জানতে হবে । এখানে কিছু প্রয়োজনীয় অব্যয় এবং সর্বনাম দেয়া হলো ।
আরও কিছু শব্দ আমাদের জানতে হবে । তবে লক্ষ্য করুন এই শব্দগুলোর বেশির ভাগের অর্থই আমরা জানি । এখানে মূল শব্দের আগে বা পরে সর্বনাম এবং অব্যয় বসে (মুক্ত বা যুক্ত ভাবে) বিভিন্ন শব্দ তৈরি হয়েছে । আগের ছকের সাথে মিলিয়ে পড়লে অর্থ মনে রাখা সহজ হবে ।
সানা
নামায শুরু করে প্রথমে আমরা বলি সানা । এখানে মূলত আমরা আল্লাহ্র প্রশংসাসহ পবিত্রতা, মর্যাদা ও মহিমা ঘোষণা করি । লক্ষ্য করুন, এখানে 'সুব্হা-ন' (পবিত্র) শব্দটি এসেছে 'সাব্বাহা' (পবিত্রতা/মহিমা ঘোষণা/বর্ণনা করা) শব্দ থেকে, যার আরবি মূল 'সিন-বা-হা' । যেমন আমরা বলি ' সুবহা-ন আল্লাহ' (আল্লাহ্ পবিত্র) কিংবা 'আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা' (আল্লাহ্ পবিত্র এবং অতি উচ্চ) । এই শব্দ থেকে আমাদের পরিচিত আরেকটি শব্দ 'তাসবিহ্' (পবিত্রতা) এসেছে ।
শয়তান থেকে আশ্রয় চেয়ে আল্লাহ্র নামে শুরু
সানা বলার পর আমরা আল্লাহ্র কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই এবং আল্লাহ্র নামে শুরু করি ।
সূরা ফাতিহা
সূরা ফাতিহা হলো আল-কুরআনের সারমর্ম । এর মোট ৭টি আয়াত । এই সূরায় আল্লাহ্ আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে আমরা তাঁর কাছে চাইবো । এখানে লক্ষ্য করুন প্রথম ৩টি আয়াতে আমরা আল্লাহ্র প্রশংসা এবং তাঁর পরিচয় (দয়াময়, করুণাময়, বিচারদিনের মালিক) তুলে ধরি । মধ্যম বা ৪র্থ আয়াতে আমরা আল্লাহ্কে অনুনয় করে বলি যে আমরাতো শুধু আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই সাহায্য চাই (তাই আমাদের আর্জি পূরণ করুন) । আর শেষ ৩ আয়াতে আমরা আমাদের আর্জি পেশ করি যে আমাদের সরল পথ দেখান, তাদের পথ যারা নিয়ামতপ্রাপ্ত, তাদের নয় যারা গযবপ্রাপ্ত । নামাযের প্রতি রাকায়াতে এটি পড়া ফরয । শব্দে শব্দে এর অর্থ দেখার আগে চলুন কিছু শব্দের অর্থ জেনে নেই ।
সূরা ফাতিহার পর আমরা অন্য কোন সূরা বা কুরআনের কিছু আয়াত পড়ি । কিছু ছোট সূরার অনুবাদ দেখুন এখানে ।
সূরা ফাতিহাকে নতুন করে জানতে Baseera Media এর এ লিঙ্ক এ যেতে পারেন ।
রূকু ও সিজদা
এবার চলুন দেখি রূকু ও সিজদা তে আমরা যে তাসবিহ্ গুলো বলি শব্দে শব্দে তার অর্থ ।
নামাযের বাকীটুকুর অনুবাদগুলো বুঝতে আমাদের আরও কিছু শব্দের সাথে পরিচিত হতে হবে যা নিচে দেয়া হলো ।
তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাত
তাশাহুদে আমরা প্রথমে আল্লাহ্র কাছে আমাদের তিনটি জিনিস পেশ করি; যেমনি ভাবে কোন প্রজা যখন বাদশাহের সাথে সাক্ষাতে যায় তখন তাঁকে খুশি করার জন্য প্রথমে তাঁর জন্য আনা উপহারসামগ্রী পেশ করে । আল্লাহ্র কাছে পেশ করা এই তিনটি উপহার হলো - আমাদের তাশাহুদে আমরা প্রথমে আল্লাহ্র কাছে আমাদের তিনটি জিনিস পেশ করি; যেমনি ভাবে কোন প্রজা যখন বাদশাহের সাথে সাক্ষাতে যায় তখন তাঁকে খুশি করার জন্য প্রথমে তাঁর জন্য আনা উপহারসামগ্রী পেশ করে । আল্লাহ্র কাছে পেশ করা এই তিনটি উপহার হলো - আমাদের সকল অভিবাদন বা মৌখিক ইবাদাত , , সকল সালাত বা শারীরিক ইবাদাত এবং এবং সকল উত্তম/পবিত্র কাজ বা সমস্ত আর্থিক ইবাদাত । তাশাহুদের প্রথম শব্দ 'আত্তাহিয়্যাতু' এর অনুবাদ কেউ করেছেন 'যাবতীয় অভিবাদন/সম্ভাষণ/অভিনন্দন' আবার কেউ করেছেন 'সমস্ত মৌখিক ইবাদাত' বলে । তবে, এই আত্তাহিয়্যাত (সম্ভাষণ/অভিনন্দন) শব্দের বহুবচন ত্তাহিয়্যাত এসেছে মুল শব্দ হায়াত মানে জীবন থেকে । কারন ইসলাম পূর্ব জাহেলীয়া যুগে মানুষ একে অপরকে সম্ভাষণ/অভিনন্দন জানাত "হায়াকাল্লাহ" বলে যার অর্থ অপর জনের জীবনের জন্য দোয়া । রসূল (সাঃ) পরে আমাদের শিক্ষা দেন ইসলামী সম্ভাষণ/অভিনন্দন ( আসসালামু আলাইকুম), কিন্তু তাহিয়া শব্দ অপরিবর্তিত থেকে যায় ।
এক বর্ণনায় এসেছে মেরাজে রসূল (সাঃ) এর সাথে আল্লাহ্ এবং ফেরেশতাদের যে কথোপকথন হয় তাই তাশাহুদ । যেমন, প্রথমে রসূল (সাঃ) আল্লাহ্র কাছে উক্ত তিন উপহার পেশ করেন (১ম লাইন); তারপর আল্লাহ্ বলেন রসূল (সাঃ) এর উপর তাঁর সালাম, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক (২য় লাইন) । এরপর রসূল (সাঃ) বলেন এই সালাম আমাদের উপর এবং আল্লাহ্র সৎ বান্দাদের উপরও বর্ষিত হোক (৩য় লাইন) । সবশেষে ফেরেশতারা সাক্ষ্য দেন আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রসূল (৪র্থ এবং ৫ম লাইন) । যাহোক, চলুন এবার দেখি শব্দে শব্দে এই তাশাহুদের অনুবাদ ।
দুরূদ
একে দুরূদে ইবারহীমও বলে । এটি সর্বশ্রেস্ট দুরূদ । এই দুরূদে আমরা আল্লাহ্র কাছে চাই যেন আল্লাহ্র সালাম/রহমত এবং বরকত নাযিল হোক আমাদের রসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরগণের উপর যেমনি ভাবে আল্লাহ্ নাযিল করেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁর বংশধরগণের উপর ।
দূয়া মাছুরা
এখানে আমরা নিজেদের করা সকল যুলুম এবং গুনাহ্ স্বীকার করে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা এবং দয়া কামনা করি ।
সবশেষে আমরা দুইপাশে সম্মানিত দুই ফেরেশতাকে সালাম দিয়ে আমাদের নামায শেষ করি ।
তাশাহুদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে Baseera Media এর এই তথ্যচিত্রটি দেখতে পারেন ।
https://www.youtube.com/embed/IrKRhUnUaic
দুরূদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে Baseera Media এর এই তথ্যচিত্রটি দেখতে পারেন ।
https://www.youtube.com/embed/ofy-HYJIcwI
Note: মানুষ মাত্রই ভুলের উর্দ্ধে নয় । তাই যেকোন ভুল কারো চোখে পরলে শুধরে দেয়ার অনুরোধ রইল ।
তথ্যসূত্রঃ
১। কোরআন এবং সালাত অনুধাবন, ডঃ আব্দুল-আজীজ আব্দুর-রহীম, কোরআন অনুধাবন একাডেমি, হায়দ্রাবাদ, ইন্ডিয়া ।
২। হিস্নুল মুসলিম
Vhaiya would you mind to share me this article as a pdf copy?
ReplyDeleteAssalamu akaikum. You can download the book where this part is in the last chapter. download from here https://www.academia.edu/44576696/%E0%A6%85%E0%A6%B0_%E0%A6%A5_%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%9D%E0%A7%87_%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%86%E0%A6%A8_%E0%A6%AA%E0%A6%A1_%E0%A6%BF_Full_Book_
Delete