বিসমিল্লাহ্‌ বলে শুরু করি

 


সাহাবাগণ কোরআন পড়তেন আর তাঁদের দুচোখ থেকে অশ্রু ঝরতে থাকতো । কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকতেন “হাযা কালামু রব্বি, হাযা কিতাবু রব্বি” - এ হলো আমার রবের কথা ! এ হলো আমার রবের কিতাব ! [1 ফুটনোট দেখুন] কোরআন পড়ার সময় এমনই হতো তাঁদের অনুভূতি, কারণ তাঁরা আল্লাহর কথাগুলোকে অন্তর থেকে অনুভব করতেন । আমাদেরওতো এই অনুভূতি হবার কথা যদি আমরা আল্লাহর কথাগুলো বুঝতে পারি । যদি বুঝতে পারি এই নিখিল জাহানের প্রতিপালক আমাদের মত অতি তুচ্ছ, নগণ্য কারো সাথে কথা বলছেন । আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন; বলছেন “তোমরা আমাকে ডাক আমি ডাকে সাড়া দিব” (সূরা গাফির ৪০:৬০) । অতএব চলুন আজ থেকেই “বিসমিল্লাহ্‌” বলে শুরু করি রবের কথাগুলো বুঝতে পারার পদযাত্রা । এই যাত্রা কোন পার্থিব লাভের জন্য না, এই যাত্রা আখিরাতের অনন্ত জীবনে আমাদের রবকে কাছে পাবার যাত্রা !

চলুন প্রথমে আল-কোরআনের সূচনা বাক্য “বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম” দিয়েই শুরু করি । এই বাক্যটি আল-কোরআনে সর্বমোট ১১৪ বার এসেছে । সূরা আত্‌-তওবা বাদে সব সূরার শুরুতে এবং সূরা আন্‌-নামলের ভিতরে একবার এসেছে । রসূল (সাঃ) এর শিক্ষা অনুযারী সব কাজের শুরুতে আমরা বিসমিল্লাহ্‌ বলি । হাদিসে এসেছে, যে কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা না হয় তা কল্যাণহীন ও বরকতশূন্য থাকে । এর মাধ্যমে কাজের শুরুতে আল্লাহ্‌র আনুগত্য করা হয় এবং মানুষের বিনয় ভাব প্রকাশ পায় । এ বাক্যের মাধ্যমে কাজ শুরু করলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকা যায় । যা হোক, চলুন দেখি এই বাক্যে কী কী শব্দ আছে । এখানে স্বয়ং আল্লাহ্‌র নাম আছে । “আল্লাহ্‌” নামটি কোরআনে মোট ২৬৯৯ বার[2 ফুটনোট দেখুন] উল্লেখ আছে । এরকম নামবাচক অনেক শব্দ কোরআনে আছে যেগুলোর বেশির ভাগই নবী-রসূলগণের নাম । এই নামগুলোর প্রায় সব গুলোই আমরা জানি কিন্তু হয়তো আরবিতে এগুলোর বানান জানি না । অর্থাৎ কোরআন পড়ায় সময় আমাদের এগুলোকে চিনতে হবে । একটা অধ্যায়ে কোরআনে সর্বাধিক ব্যবহৃত এই নামবাচক শব্দগুলো আমরা দেখবো । এই বাক্যে ‘আল্লাহ্‌’ নামের সাথে আল্লাহ্‌র আরো ২টি গুণবাচক নাম আছে; আর-রহ্‌মা-ন, আর-রহীম । এই নাম দুটি আরবি ৩-বর্ণের ১টি শব্দমূল ‘রহম’ ( = দয়া, করুণা, রহমত, অনুগ্রহ) থেকে এসেছে । এই দুটি নাম আল-কোরআনে যথাক্রমে মোট ১১৬ ও ৫৭ বার আছে এবং এই মূল থেকে কোরআনের মোট ৩৩৯ টি শব্দ এসেছে । আমরা জানি, আরবি ভাষার বেশির ভাগ শব্দই তৈরি হয়েছে ৩-বর্ণের শব্দমূল থেকে । এই শব্দমূলের অর্থ জানলে এ থেকে আগত অন্যান্য শব্দের অর্থ আমাদের মনে রাখতে সহজ হবে । ‘শব্দমূল থেকে শব্দ শিখি’ অধ্যায়ে কোরআনের সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দমূল এবং এথেকে আগত শব্দগুলো দেখবো ইনশা-আল্লাহ । যা হোক, এই বাক্যের শুরুতে ১টি ১-বর্ণের শব্দ “বি” =(সাথে, সহ) আছে । এর সাথে “ইস্‌ম” ( = নাম) যুক্ত হয়ে ১টি বহু-বর্ণের শব্দ তৈরি করেছে । আল-কোরআন পড়তে গেলে এভাবে, আমরা ১-বর্ণের, ২-বর্ণের, ৩-বর্ণের এবং বহু-বর্ণের শব্দ পাব । এই শব্দগুলোকে ভেঙ্গে শব্দের মূল এবং এর সাথে যুক্ত বর্ণগুলো চিনতে পারলেই কোরআন অর্থ বুঝে পড়া আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ ।

এই অধ্যায়ে আমরা চিনবো কোরআনে সর্বাধিক ব্যবহৃত ১৯টি শব্দ যা কোরআনে এসেছে মোট ২৫৯৬৬ বার । অর্থাৎ মাত্র ১৯টি শব্দ চিনতে পারলে আল-কোরআনের তিন ভাগের এক ভাগ শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ !! নিচের টেবিলে এই শব্দগুলোর অর্থ ও কোরআনে এর ব্যাবহারসহ, পুনারাবৃত্তি সংখ্যার ভিত্তিতে অধঃক্রমে সাজানো হল । লক্ষ্য করুন, এগুলোর বেশির ভাগই অব্যয় বা সর্বনাম শব্দ । এদের মধ্যে ৩টি ক্রিয়া (ক্ব-লা, কা-না, আ-মানা) আছে । কিছু শব্দের একাধিক অর্থ ও ব্যাবহার আছে যা কুরআন থেকে উদাহরণ দেয়া হলো । এদের মধ্যে “আল্লাহ্‌”, “রব” ও “আমানা” (ঈমান আনা) শব্দের সাথেতো আমাদের আগেই পরিচয় আছে ।

ফুটনোট

[1] আমর বিন হিশাম অর্থাৎ আবু জেহেলের পুত্র ইকরিমা (রাঃ) এর জীবনীতে এমন বর্ণণা পাওয়া যায় । মক্কা বিজয়ের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন । তাঁর দিনের বেলা কাটত রোজা রেখে, মসজিদে ও কুরআন অধ্যয়ন করে, আর রাত কাটত নিভৃতে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে। তখন কুরআন কোন বই আকারে ছিল না, তা ছিল চামড়া, বড় উটের হাড়, পাথর ইত্যাদিতে লিখিত অবস্থায়। কুরআনের সে সংরক্ষিত অংশগুলোকে বলা হয় মুসাফ। ইকরিমা প্রায়ই এ মুসাফগুলোকে চুমু খেয়ে, মুখের উপর রেখে অঝোর ধারায় কাঁদতেন আর বলতেন, “কিতাবু রাব্বী, কালামু রাব্বী”।

[2] আল-কোরআনের শব্দগুলোর পুনরাবৃত্তির সংখ্যাগুলো বিভিন্ন তথ্যসূত্রে ভিন্নতা পাওয়া যায় । বিশেষ করে ছোট শব্দের (১/২-বর্ণের শব্দ) ক্ষেত্রে । কারণ কোন বর্ণ বা বর্ণের সমষ্টিকে শব্দ বিবেচনা করা হয়েছে তার পার্থক্যের জন্য এই ভিন্নতা । যেমন কোথাও ‘বিমা’ কে ১টি শব্দ বিবেচনা না করে ২টি শব্দ (বি, মা) বিবেচনা করা হয়েছে । এই বইয়ের এই তথ্যগুলো নেয়া হয়েছে “Quran Word Frequency” বই থেকে । তবে শব্দের পুনরাবৃত্তির সংখ্যা যাই হোক না কেন অর্থ বুঝে কোরআন পড়ার ক্ষেত্রে এই সংখ্যাগুলোর কোন ভূমিকা নেই । এই বইয়ে এই পুনরাবৃত্তির সংখ্যাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে শুধুমাত্র আগ্রহ তৈরি করার জন্য ।

******************************************************************************

PDF download এর জন্য এখানে ক্লিক করুন

আগের অধ্যায় ২। কতটা সহজ অর্থ বুঝে কোরআন পড়া ?

পরের অধ্যায় ৪। কুরআনের শব্দগুলো কেমন ?

******************************************************************************

সর্বশেষ পরিমার্জন ০৪-০৩-২০২০

No comments:

Post a Comment