দু’আ - ১
আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাই (২:৬৭)
দু’আ - ২
হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (৩:১৬)
দু’আ - ৩
পিতামাতার প্রতি আমরা কীরূপ আচরন করবো এবং তাদের জন্য কিভাবে দু'আ করবো তা আল্লাহ আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। আল-কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈলের দুটি আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ
[১৭:২৩]
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা ।
[১৭:২৪]
তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে আমার রব! তাদের দু’জনকে (পিতামাতা) দয়া করুন যেমনভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন ।
দু’আ - ৪
হে আমাদের রব! আমাদেরকে (পরিপূর্ণ) ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন। (৭:১২৬)
পটভূমি
**********
সদ্য ঈমান আনা একদল লোকের নিশ্চিত মৃত্যুর ঠিক পূর্বে করা এই দু'আ ।
মূসা (আঃ) এর মুকাবেলায় ফেরাউন ডেকে নিয়ে এসেছিল একদল যাদুকর । যাদু প্রতিযোগিতায় তারা যখন মূসা (আঃ) এর মুযেযার কাছে পরাজিত হল সকলে তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং ঈমান আনল ।
"ফেরাউন বলল, তোমরা কি (তাহলে) আমার অনুমতি দেয়ার আগেই ঈমান আনলে! এটা প্রতারণা, যা তোমরা এ নগরীতে প্রদর্শন করলে। যাতে করে এ শহরের অধিবাসীদিগকে শহর থেকে বের করে দিতে পার। সুতরাং তোমরা শীঘ্রই বুঝতে পারবে। অবশ্যই আমি কেটে দেব তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে। তারপর তোমাদের সবাইকে শূলীতে চড়িয়ে মারব। তারা (যাদুকররা) বলল, আমাদেরকে তো মৃত্যুর পর নিজেদের রবের নিকট ফিরে যেতেই হবে। বস্তুতঃ আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো এ কারণেই যে, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের রবের নিদর্শনসমূহের প্রতি যখন তা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। হে আমাদের রব! আমাদেরকে (পরিপূর্ণ) ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।" (৭:১২৩-১২৬)
দু’আ - ৫
"আর আল্লাহর জন্যই হল আসমান ও যমিনের বাদশাহী। আল্লাহই সর্ব বিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী। নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) হে আমাদের রব! আপনি এসব অনর্থক সৃস্টি করেননি, সকল পবিত্রতা আপনারই, সুতরাং আমাদেরকে আপনি আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।"(৩:১৮৯-১৯১)
হিদায়েত পাবার পরও শয়তানের প্ররোচনায় মানুষের অন্তর বিচ্যুত হতে পারে । তাই আল্লাহ আমাদের এই দু'আ শিখিয়ে দিয়েছেন । আল্লাহ বলেনঃ
"তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।(তারা বলে) 'হে আমাদের রব! আপনি হিদায়েত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন । নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা' ।" (৩:৭-৮)
হে আমাদের রব! আমরা সে বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছি যা আপনি নাযিল করেছেন এবং আমরা রসূলকে অনুসরণ করেছি । অতএব, আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের সাথে তালিকাভুক্ত করে নিন । (৩:৫৩)
প্রেক্ষাপটঃ যখন হযরত ঈসা (আঃ) ইয়াহুদীদের একগুয়েমী ও বিবাদ প্রত্যক্ষ করলেন এবং বুঝতে পারলেন যে, তারা হঠকারিতা হতে ফিরে আসবে না তখন তিনি বললেন, আল্লাহর উপর আমার আনুগত্য স্বীকারকারী কেউ আছে কি? হযরত ঈসা (আঃ)-এর এ আহ্বানেও কিছু বানী ইসরাঈল সাড়া দেয়, তার উপর ঈমান আনয়ন করে এবং তাকে পূর্ণভাবে সাহায্য করে। আর তারা ঐ আলোকের অনুসরণ করে যা আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছিলেন, অর্থাৎ ইঞ্জীল। এ লোকগুলো তাদের প্রার্থনায় বলে, “হে আমাদের রব! সাক্ষীগণের মধ্যে আমাদের নাম লিখে নিন"। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর মতে এর ভাবার্থ হচ্ছে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উম্মতের মধ্যে নাম লিখে নেয়া। [তাফসির ইবনে কাসির]
দু’আ - ৮
প্রেক্ষাপটঃ
উহুদ প্রান্তরে মুসলমানগণ পরাজিত হয়েছিলেন এবং তাদের কিছু সংখ্যক লোক শহীদও হয়েছিলেন। সেদিন শয়তান প্রচার করেছিল যে, মুহাম্মাদ (সঃ) শহীদ হয়েছেন। আর এদিকে ইবনে কামিআ' নামক একজন কাফির মুশরিকদের মধ্যে প্রচার করে-‘আমি মুহাম্মাদ (সঃ)-কে হত্যা করে আসছি। প্রকৃতপক্ষে শয়তানের কথা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব এবং ঐ উক্তিও মিথ্যা ছিল। সে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে আক্রমণ করেছিল বটে কিন্তু তাতে শুধুমাত্র তাঁর চেহারা মুবারক কিছুটা আহত হয়েছিল, তাছাড়া আর কিছুই নয়। এ মিথ্যা সংবাদে মুসলমানদের মন ভেঙ্গে যায়, তাঁদের পা টলে যায় এবং তারা হতবুদ্ধি হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নে উদ্যত হন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয় যে, পূর্বের নবীদের মত মুহাম্মাদ (সঃ) একজন নবী। হতে পারে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হবেন কিন্তু আল্লাহ পাকের দ্বীন দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ করবে না। আল্লাহ্ বলেনঃ
“আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল গত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।
আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো ।
আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।
তারা আর কিছুই বলেনি-শুধু বলেছে, হে আমাদের রব! আমাদের গুনাহগুলো এবং আমাদের কাজ-কর্মে বাড়াবাড়িগুলোকে আপনি ক্ষমা করে দিন, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখুন এবং কাফির জাতির উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন।
অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার সওয়াব দান করেছেন এবং যথার্থ আখেরাতের সওয়াব। আর যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন”। (৩:১৪৪-১৪৮)
দু’আ - ৯
হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রীদের (জোড়া/যুগল) [১] এবং আমাদের সন্তান-সন্ততিদের থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা [২] বানিয়ে দিন । (২৫:৭৪)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআনে আয়াতটি এভাবে অনুবাদ করা হয়েছেঃ “হে আমাদের রব! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন" ।
*******************************
[১] زَوْجٌ অর্থ স্ত্রী, জোড়া, যুগল । এর বহুবচন اَزْوَاجٌ ।
[২] অনুসরণযোগ্য । অর্থাৎ, এমন আদর্শস্বরূপ বানিয়ে দিন যে, সৎকাজে তারা যেন আমাদের অনুসরণ করে ।
দু’আ - ১০
হে আমাদের রব! আমাদেরকে বের করুন এই জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা জালিম এবং আমাদের জন্য আপনার নিকট থেকে একজন অভিভাবক বানিয়ে দিন (নির্ধারণ করুন)। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী । (৪:৭৫)
************************
নেতা বা অভিবাবকবিহীন ভাবে বর্তমান বিশ্বের নানা প্রান্তে মুসলিমরা আজ অত্যাচারের স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত । তাই, প্রত্যেক নামাযের পর কুরআনের এই দু’আটি সবারই পড়া উচিত ।
পটভূমিঃ
*************
রসূল (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পর মক্কা নগরীতে এমন কিছু দুর্বল মুসলিম রয়ে গিয়েছিলেন, যারা দৈহিক দুর্বলতা এবং আর্থিক দৈন্যের কারণে হিজরত করতে পারছিলেন না। পরে কাফেররাও তাদেরকে হিজরত করতে বাঁধাদান করেছিল এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে আরম্ভ করেছিল, যাতে তারা ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। যেমন ইবন আব্বাস ও তাঁর মা, সালামা ইবন হিশাম, ওলীদ ইবন ওলীদ, আবু জান্দাল ইবন সাহল্ প্রমূখ। এসব সাহাবী নিজেদের ঈমানী বলিষ্ঠতার দরুন কাফেরদের অসহনীয় উৎপীড়ন সহ্য করেও ঈমানের উপর স্থির থাকেন। অবশ্য তাঁরা এসব অত্যাচার উৎপীড়ন থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য বরাবরই আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের নিকট দু’আ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের সে দু'আ কবুল করে নেন এবং মুসলিমদেরকে নির্দেশ দেন যাতে তাঁরা জিহাদের মাধ্যমে সেই নিপীড়িতদেরকে কাফেরদের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন।
এ আয়াতে মুমিনরা আল্লাহ তা’আলার নিকট দুটি বিষয়ে দু'আ করেছিলেন। একটি হলো এই যে, আমাদেরকে এই (মক্কা) নগরী থেকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করুন এবং দ্বিতীয়টি হলো, আমাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাঠান। আল্লাহ তাদের দু’টি দু'আই কবুল করে নিয়েছিলেন। তা এভাবে যে, কিছু লোককে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, যাতে তাঁদের প্রথম দু'আটি পূরণ হয়েছিল। অবশ্য কোন কোন লোক সেখানেই রয়ে যান এবং বিজয়ের পর রসূল (সাঃ) আত্তাব ইবন উসায়দ (রাঃ)-কে সেসব লোকের মুতাওয়াল্লী নিযুক্ত করেন। অতঃপর তিনি এসব উৎপীড়িতদেরকে অত্যাচারীদের উৎপীড়ন-অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন। আর এভাবেই পূর্ণ হয় তাদের দ্বিতীয় দু'আটি। আয়াতে বলা হয়েছে যে, জিহাদের নির্দেশ দানের পিছনে একটি কারণ ছিল সে সমস্ত অসহায় দুর্বল নারী-পুরুষের দু'আ। মুসলিমগণকে জিহাদ করার নির্দেশ দানের মাধ্যমে সে দু'আ কবুলের কথাই ঘোষণা করা হয়েছে। [১]
[১] Tafsir Abu Bakr Zakaria
দু’আ - ১১
হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের উপর জুলুম করেছি আর যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং রহম/দয়া না করেন (তবে) অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবো । (৭:২৩)
**************************************************
তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার এ হল সেই বাক্যসমূহ, যা আদম (আঃ) বরকতময় মহান আল্লাহর কাছ থেকে শেখেন। যেমন সূরা বাক্বারার ২:৩৭ নং আয়াতে এ কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। শয়তান আল্লাহর অবাধ্যতা করল এবং তারপর সে কেবল এর উপর অটলই থাকেনি, বরং এটাকে বৈধ ও সাব্যস্ত করার জন্য জ্ঞান ও অনুমানভিত্তিক দলীলসমূহ পেশ করতে লাগল। ফলে সে আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বিতাড়িত এবং চিরদিনকার জন্য অভিশপ্ত গণ্য হল। পক্ষান্তরে আদম (আঃ) স্বীয় ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার প্রতি যত্নবান হলেন। ফলে তিনি আল্লাহর রহমত ও তাঁর ক্ষমা লাভের যোগ্য গণ্য হলেন। এইভাবে দু'টি পথের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে গেল। শয়তানের পথের এবং আল্লাহওয়ালাদের পথেরও। পাপ করে অহংকার প্রদর্শন করা, তার উপর অটল থাকা এবং তাকে সঠিক সাব্যস্ত করার জন্য দলীলাদির স্তূপ খাড়া করা ইত্যাদি হল শয়তানী পথ। আর পাপ করার পর অনুতাপে দগ্ধ হয়ে আল্লাহ-সমীপে নত হয়ে যাওয়া এবং তওবা ও ক্ষমা চাওয়ায় সচেষ্ট হওয়া ইত্যাদি হল আল্লাহর বান্দাদের পথ। [১]
[১] Tafsir Ahsanul Bayaan
******************************************************
পটভূমিঃ ************* আমাদের খুব পরিচিত এই দু’আটিই রবের নিকট করা মানব জাতির সর্বপ্রথম দু’আ । এর প্রেক্ষাপট আল্লাহ আল-কুরআনের সূরা আরাফে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন ।
“হে আদম তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। অতঃপর সেখান থেকে যা ইচ্ছা খাও তবে এ বৃক্ষের কাছে যেয়োনা তাহলে তোমরা গোনাহগার হয়ে যাবে। অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী। সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী। অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। অনন্তর যখন তারা বৃক্ষ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজের উপর বেহেশতের পাতা জড়াতে লাগল। তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের উপর জুলুম করেছি আর যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং রহম/দয়া না করেন (তবে) অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবো । আল্লাহ বললেনঃ তোমরা নেমে যাও। তোমরা এক অপরের শত্রু। তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে বাসস্থান আছে এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ফল ভোগ আছে। বললেনঃ তোমরা সেখানেই জীবিত থাকবে, সেখানেই মৃত্যুবরন করবে এবং সেখান থেকেই পুনরুঙ্খিত হবে”। (৭:১৯-২৫)
চলবে ইনশা-আল্লাহ ......
No comments:
Post a Comment