সূচী
১। গায়েবী সাহায্য
২। মজলুমের দু'আ আল্লাহ্ কখনও ফেরান না
৩। নবী (সাঃ) এর দু'আ-র বরকতে একজন সাহাবীর অকল্পনীয় প্রাচুর্য লাভ
৪। যুদ্ধের ময়দানে দু’আর বরকত
৫। 'আমি হচ্ছি আমার পিতা ইব্রাহীমের (আঃ) দু’আ-র ফল'
*****************************************************************************
*****************************************************************************
Golden stories of accepted prayers - Abdul Malik Mujahid, Darussalam-A modern islamic publication, Riyadh, 2013.
ভাবানুবাদঃ Muhammad Masood
*****************************************************************************
১। গায়েবী সাহায্য
আল-হাসান বিন সুফিয়ান আন-নাসবী, একজন মহান পণ্ডিত এবং হাদিস বিশারদ । তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ও পুণ্যবান ব্যক্তি । একবার তিনি নয়জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একজন শাইখ-উল-হাদিস এর কাছে হাদিসের উপর আরও জ্ঞান অন্বেষণের জন্য মিশরে গেলেন ।
কিন্তু, সেখানে কিছু দিন যাওয়ার পর তাদের সব টাকা ফুরিয়ে গেল । খাবার দাবাড়ও ফুরিয়ে গেল । তিন দিন কষ্ট সহ্য করার পর এখন তাদের কাছে বাইরে গিয়ে ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় থাকল না । একজন সম্মানীয়, আত্ম-মর্যাদাবোধসম্পন্ন যুবকের পক্ষে ভিক্ষা করা কোন সহজ কাজ নয় । কিন্তু, সার্বিক অবস্থা তাদেরকে এ কাজে বাধ্য করছে । যা হোক, ভিক্ষার জন্য কে বের হবেন তা ঠিক করার জন্য তারা লটারি করার সিদ্ধান্ত নিল । অতঃপর, লটারিতে দায়িত্ব এসে পরল ইমাম আল-হাসান বিন সুফিয়ান এর উপর ।
অন্যের কাছে হাত পাততে যাওয়ার আগে ইমাম আল-হাসান বিন সুফিয়ান দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন এবং মসজিদের এক কোণায় বসে সর্বসক্তিমান মহান আল্লাহ্র পাণে দুহাত তুলে লম্বা দু’আ ধরলেন । এমন সময় তার খোঁজে সুন্দর পোশাকে এক সুদর্শন যুবক মসজিদে প্রবেশ করল । ইমাম আল-হাসান বিন সুফিয়ান তখনও দু’আয় মগ্ন ছিলেন । একজন ছাত্র তাকে দেখিয়ে দিল । ইমাম দু’আ শেষ করে মাথা তুলে তাকালেন । যুবক তাঁকে বলল “ও শাইখ, মিশরের বর্তমান শাসক, আমীর আহমদ বিন তুলুন আবুল আব্বাস তুর্কী আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন । তিনি আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে তিনি আপনাদের এই অবস্থা সম্পর্কে না জানার কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন । উনার দায়িত্ব ছিল আপনাদের খোঁজ খবর রাখার । কাল তিনি নিজে এসে আপনাদের সাথে দেখা করবেন । আমি উনার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য কিছু নিয়ে এসেছি যা অবশ্যই আপনাদের গ্রহণ করতে হবে ।” যুবকটি এই বলে প্রত্যেক ছাত্রকে একটি করে ১০০ দিনার ভর্তি থলে উপহার দিলেন ।
ছাত্ররা এই মহানুভবতায় অত্যন্ত খুশি হয়ে যুবককে জিজ্ঞাসা করলঃ “কিভাবে আমীর আমাদের এই অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেলেন?” যুবকটি উত্তর দিল, “একদিন আমীর দুপুরে শুয়ে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলেন আর স্বপ্নে দেখলেন এক অশ্বারোহী আকাশে ভেসে আমীরের নিকট আসছে । সে কাছে এসে আমীরকে ডেকে আদেশ করল ‘উঠ; আল-হাসান বিন সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সাহায্য কর । তাদের কাছে যাও । তারা তিন দিন যাবত ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে ।’ আমীর ঘুম থেকে জেগে দেরী না করে এই দিনারগুলো দিয়ে আমাকে আপনাদের নিকট পাঠালেন ।”
এর কিছুক্ষণ পরই মিশরের শাসক মসজিদে প্রবেশ করলেন, ছাত্রদের সাথে নিজে দেখা করার জন্য । তারপর, তিনি মসজিদের চারদিকের জায়গাটি কিনে নিলেন এবং মসজিদ এবং ছাত্রদের কল্যাণে দাণ করে দিলেন ।
***************************************************************************************
#দুআ_কবুলের_সোনালী_সেই_গল্পগুলো
২। মজলুমের দু'আ আল্লাহ্ কখনও ফেরান না
একদিন বাজারে এক লোকের সাথে আমার দেখা হল যার একটি হাত নেই । সে বলল যারা আমার গল্পটা শুনবে তারা আর কখনও কারও ক্ষতি করবে না । আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ‘কি হয়েছিল’ ? সে আমাকে নীচের ঘটনাটা বললঃ
"আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলাম, আরও স্পষ্ট ভাবে বললে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলাম । আমি একদিন দেখলাম এক জেলে একটি জ্যান্ত তাজা বড় মাছ নিয়ে যাচ্ছে । আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, 'এই মাছটি আমাকে দিয়ে দাও' । সে আমাকে বলল এই মাছ দিতে তার কোনও আপত্তি নেই, তবে সে যে দাম চাইবে তা তাকে দিতে হবে । সে আরও বলল, ‘বাড়িতে আমার খাওয়ার কিছু নেই এবং আমার বাচ্চারা বসে আছে আমি তাদের খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে যাব । আর, মাছটি ধরতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে ।’ তার কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে তাকে পিটাতে শুরু করলাম এবং তার হাত থেকে মাছটি জোর করে ছিনিয়ে নিলাম । মাছটি নিয়ে আমি যখন বাসার দিকে আসছিলাম হঠাৎ এটা আমার বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কামড় দিল। আমি প্রচণ্ড ব্যথা পেলাম এবং বাসায় ফিরতে ফিরতে আমার ব্যথা আরও বেড়ে গেল । তখন রাত, তাই ভাবলাম পরের দিন ডাক্তারের কাছে যাব । তীব্র ব্যথায় আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি ।
পরের দিন সকালে আমি একজন ডাক্তারকে আমার হাতটা দেখালাম । ডাক্তার আমার হাত দেখে বললেন আঙ্গুলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, তাই দ্রুত এটা কেটে ফেলতে হবে । দেরি করলে সংক্রমণ পুরো হাতে ছড়িয়ে যেতে পারে । আমি ডাক্তারকে বললাম তবে তাই করুন । ডাক্তার আমার আঙুলটা কেটে ফেললেন । কাটা আঙ্গুল নিয়ে যখন বাসায় ফিরলাম দেখলাম ব্যথাটা আরও তীব্র হয়েছে । সারারাত আমি হাতের যন্ত্রণায় কাতরালাম । পরের দিন সকালে আমি আবার ডাক্তারের কাছে গেলাম । ডাক্তার আমাকে হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলতে বললেন । ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তাই করা হলো । ভাবলাম এবার বুঝি আমার অগ্নি পরীক্ষার শেষ হল । কিন্তু না, ব্যথা আরও বেড়েই চলল । তীব্র যন্ত্রণায় আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলাম । ডাক্তার আবার আমাকে পরীক্ষা করে দেখলেন এবং বললেন এবার পুরো হাতটাই কেটে ফেলতে হবে । এটাই একমাত্র সমাধান । নাহলে সংক্রমণ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়বে ।
আমার ব্যাপারটা এলাকায় দ্রুতই জানাজানি হয়ে গেল । একদিন এক ধার্মিক লোক আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনার এটার কারণ কি?’ আমি যখন তাকে মাছের গল্পটা বললাম, তিনি বললেনঃ ‘এখনই আপনার ঐ জেলের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া দরকার । আপনি শুধু শরীরের একটা অংশ হারিয়েছেন । এখনো সময় আছে । তাকে খুঁজে বের করুন এবং ক্ষমা চান ।’ সাথে সাথেই আমি তাকে খুঁজতে শুরু করলাম কিন্তু পরে জানলাম সে এই শহর ছেড়ে চলে গেছে । তবে ভাগ্যক্রমে তাকে অন্য একটা শহরে খুঁজে পেলাম। আমি যখন তাকে পেলাম তার পা ধরে কান্না শুরু করলাম। বললামঃ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে ক্ষমা করে দাও, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে মাফ করে দাও’ ।
জেলে আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কে? তাকে বললাম আমিই তোমার মাছ জোর করে কেড়ে নিয়েছিলাম । তারপর আমার কাটা হাতটা তাকে দেখালাম। জেলে এটা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো এবং বলল ‘ভাই, আপনার এই অবস্থা দেখে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে । আমি আল্লাহর খুশির জন্য আপনাকে মাফ করে দিলাম ।’
তারপর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ‘ভাই, তুমি কি বলবে আমাকে কি অভিশাপ দিয়েছিলে যখন আমি তোমাকে মেরে মাছটা নিয়ে নিয়েছিলাম ? জেলে বলল সে অভিশাপ দিয়ে বলেছিলঃ
“হে আল্লাহ! আমি দুর্বল; সে শক্তিশালী, সে জোর করে অন্যায়ভাবে আমার জীবিকা কেড়ে নিয়েছে। হে আমার পালনকর্তা, তাকে আপনি কষ্ট ও সঙ্কটে ডুবিয়ে রাখুন। আর আমাকে আপনার শক্তি ও অলৌকিক ক্ষমতা দেখান।”
আমি বললাম, ‘ভাই ! আল্লাহ তোমাকে তাঁর শক্তি ও অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি আমার পাপের জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি’।” (1)
**************************************************************************************
#দুআ_কবুলের_সোনালী_সেই_গল্পগুলো
(1) Mawsooat-ul-Qisas
৩। নবী (সাঃ) এর দু'আ-র বরকতে একজন সাহাবীর অকল্পনীয় প্রাচুর্য লাভ

সাহাবী উরওয়াহ ইবনে আবি আল-যাদ আল-বারিক (রাঃ) (1) কে একদিন রসূল (সাঃ) এক দিনার দিলেন এবং বাজার থেকে একটি ছাগী কিনে আনতে বললেন । তিনি তা কিনে ফেরার পথে একজনের সাথে দেখা হল যে তাঁর ছাগীটি ২ দিনার দিয়ে কিনে নিলেন । তারপর তিনি আবার বাজারে গিয়ে এক দিনার দিয়ে আরেকটি ছাগী কিনে রসূল (সাঃ) এর নিকট ফিরে আসলেন ।
তিনি রসূল (সাঃ) কে ছাগীটি এবং অতিরিক্ত এক দিনার ফেরত দিলেন । রসূল (সাঃ) তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বললেন । রসূল (সাঃ) তাঁর এই সততা এবং ব্যবসায়ী দক্ষতা দেখে খুব মুগ্ধ হলেন । তিনি তাঁর জন্য আল্লাহ্র নিকট দু'আ করলেনঃ
"হে আল্লাহ্, তাঁর ব্যবসায় আপনি বরকত দিন"
বরাবরের মতো আল্লাহ সুবহানুতা'আলা তাঁর প্রিয় হাবীব রসূল (সাঃ) এর করা সাহাবীর জন্য এই দু'আও কবুল করে নিলেন । নবী (সাঃ) পবিত্র দু'আ-র বরকতে দিন দিন সাহাবীর ব্যবসায় অভাবনীয় উন্নতি হতে থাকল । ব্যবসায় তাঁর এমনতর উন্নতির দরুন পরবর্তীতে তাঁর ব্যাপারে একটা কথা প্রচলিত হয়ঃ "ব্যবসার জন্য তিনি যদি ধুলোও কিনতেন তবুও সেখান থেকে তাঁর লাভ হতো" ।
একবার তিনি কুফা বাজারে কেনা-বেচায় একদিনে ৪০ হাজার দিনার লাভ করেন, তখনকার দিনে যা ছিল অকল্পনীয় !
*********************************************************************************
#দুআ_কবুলের_স্বর্ণালী_সেই_গল্পগুলো
(1) একজন সাহাবী, জন্ম আনুমানিক ৬১০ খ্রীঃ, মৃত্যু ৬৮১ খ্রীঃ । তিনি কুফার গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন (৬৩৫-৬৩৭) । https://en.wikipedia.org/wiki/Urwah_al-Bariqi
৪। যুদ্ধের ময়দানে দু’আর বরকত
উমাইয়া সেনাপতি কুতাইবা ইবনে মুসলিমের (১) নেতৃত্বে মুসলমানবাহিনী কর্তৃক আফগানিস্তানের কাবুল বিজয়ের লক্ষ্যে যুদ্ধ চলছে । যুদ্ধে নিয়োজিত আছে মুসলমানদের প্রায় এক লক্ষ সেনা দল । তখন যোহরের নামাযের ওয়াক্ত । যুদ্ধ এক কঠিন সংকটাপন্ন অবস্থায় রূপ নিল । অনেক জীবন তখন হুমকির মুখে । সেনাপতি কুতাইবা যোহরের নামায শেষ করে সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে আরজ করলেনঃ
"হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে সাহায্য করুন; আমাদের বিজয় দান করুন । সাহায্য আর বিজয় তো আপনার কাছ থেকেই আসে ..."
দু’আ শেষ করে সেনাপতি কুতাইবা এক সৈনিককে আদেশ করলেন মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসিকে (২) ডেকে আনতে । সৈনিকটি যখন তাকে খুঁজে পেল তখন তিনি নত হয়ে হাত উপরে তুলে দু’আ করছিলেন আর কাঁদছিলেন । সৈনিকটি ফিরে এসে সেনাপতিকে জানাল । সেনাপতি বললেনঃ
"আল্লাহর শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ । আমার নিকট ধারালো উন্মুক্ত তরবারীসহ এক লক্ষ যুদ্ধরত সৈনিকের থেকেও মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসির দু'আ-য় রত এই হাত অনেক বেশি শক্তিশালী” ।
তারপর ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধ শেষে শত্রুপক্ষের অপমানজনক পরাজয় নিশ্চিত হল । সর্বশক্তিমান আল্লাহ মুসলমানদের মহান বিজয় দান করলেন । তখন আসর নামাজের সময় হয়ে এসেছে । মুসলমানবাহিনী বিজয়ী বেশেই কাবুল শহরে প্রবেশ করে আসরের নামাজ আদায় করল !
*****************************************************
#দুআ_কবুলের_স্বর্ণালী_সেই_গল্পগুলো
(১) কুতাইবা ইবনে মুসলিম (৬৬৯-৭১৫ খ্রিস্টাব্দ) উমাইয়া খলিফা-আবদ আল-মালিক এবং আবদুল ওয়ালিদ প্রথমের অধীনে আরব সেনাপতি ছিলেন । তিনি আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়া বিজয় করে উমাইয়া খিলাফতের সীমানা প্রসারিত করেছিলেন ।
(২) তিনি একজন অত্যন্ত ধার্মিক ইসলামি পন্ডিত ছিলেন। তিনি কুতাযইবা ইবনে মুসলিমের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন এবং পরবর্তিতে তিনি বিচারক নিযুক্ত হয়েছিলেন ।
৫। 'আমি হচ্ছি আমার পিতা ইব্রাহীমের (আঃ) দু’আ-র ফল'

ক্বা'বা ১৯৫০ সালে
হাজার বছর আগে, ইব্রাহিম খলীলউল্লাহ (আঃ) এবং তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আঃ) মক্কার পানিশুন্য শুকনো এই মরু উপত্যকায় কা'বা ঘর নির্মাণ করেছিলেন । এই বিশ্বজাহানে কা'বা ঘরই প্রথম স্থান যাকে বানানো হয়েছিল মহান আল্লাহ্ সুব্হানু তাআ’লার ইবাদতের জন্য । নিঃসন্দেহে একমাত্র এ পবিত্র ঘরই এই উচ্চতর মর্যাদা ও অতুলনীয় গৌরব অর্জন করে ।
ইমাম আল-ক্বস্তালানী লিখেছেনঃ
“এই কা’বা ঘর দশবার নির্মিত হয়েছিল। সর্বপ্রথম ফেরেশতারা এটি নির্মান করেছিল । দ্বিতীয় বার আদম (আঃ), তৃতীয় বার আদম (আঃ) এর পুত্র সীথ (আঃ), চতুর্থ বার ইব্রাহিম (আঃ), পঞ্চম বার আ'মালকা সম্প্রদায়, ষষ্ঠবার বনু জুরহুম উপজাতি, সপ্তম বার আল্লাহর নবীর পূর্বপুরুষ কুসাই ইবনে কিলাব, অস্টম বার কুরাইশ, নবম বার আবদুল্লাহ বিন জুবায়ের (রঃ) এবং দশমবার হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এটি নির্মান করেন ।”
চতুর্থবার যখন কা’বা ঘরটি ইব্রাহিম (আঃ) এবং পুত্র ইসমাঈল (আঃ) নির্মান করছিলেন তখন এর প্রাচীরগুলো আরো উঁচু করেন । ইব্রাহিম (আঃ) পুত্রকে একটি পাথর আনতে বলেন যাতে তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে নির্মান কাজটি শেষ করতে পারেন । ইসমাঈল (আঃ) পিতার জন্য যে পাথরটি এনেছিলেন পরবর্তীতে সেটাই ‘মাকামে ইব্রাহিম’[1] নামে পরিচিত হয় ।
আল্লাহর ঘর নির্মাণ শেষে ইব্রাহিম (আঃ) নিম্নলিখিত দু’আ-টি করেছিলেনঃ
এবং (স্মরণ কর) যখন ইব্রাহীম বলেছিলেন, “হে আমার পালনকর্তা, আপনি একে নিরাপদ নগরী বানান এবং এর অধিবাসীদেরকে ফলমূলের রিযিক দিন যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে” [সূরা বাকারা ২:১২৬]।
ইব্রাহিম (আঃ) এর এই দু’আ কবুল হয়েছিল । তাঁর প্রার্থনা অনুসারে, এই স্থানটি এখনও শান্তির নগরী । বিশ্বের সব ধরণের ফল ফলাদি এখানকার অধিবাসীরা সারা বছরই খেতে পারে ।
তারপরে ইব্রাহিম (আঃ) এবং ইসমাঈল (আঃ) আরও একটি দু’আ করেছিলেনঃ
"হে আমাদের রব! তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রসূল প্রেরণ করুন (প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মুহাম্মদ সাঃ কে প্রেরণ করে তাদের দু’আর জবাব দিলেন) যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন এবং তাদেরকে কিতাব (এই কোরআন) এবং হিকমত শিক্ষা দিবেন, আর তাদেরকে পবিত্র করবেন । নিশ্চয়ই আপনি সর্বশক্তিমান, প্রজ্ঞাময় ।" [সূরা বাকারা ২:১২৯]
এখানে ‘পবিত্র’ বলতে তাঁরা বুঝিয়েছেন যে তিনি (রসূল) পবিত্র করবেন তাঁর অধিবাসীদের হৃদয়, তাদের আচরণ সহ পুরো জীবনযাত্রা, চরিত্র, অভ্যাস, সামাজিক লেনদেন, পারস্পরিক সম্পর্ক এবং রাজনীতি । সাহাবাগণের প্রতি এটিই ছিল আল্লাহর নবীর ব্যবহারিক দায়িত্ব, যা তিনি নিজের যোগ্যতার সর্বোত্তমভাবে পূর্ন করেছিলেন ।
পিতা-পুত্রের এই দু’আ আল্লাহ্ পূর্ণ করলেন কয়েক হাজার বছর পর । পৃথিবীতে আগমন করলেন সকল সৃষ্টির সেরা, আদম (আঃ) এর বংশধরের প্রধান প্রতিনিধি, আল্লাহ্র কাছে গুনাহগার বান্দাদের পক্ষে একমাত্র সুপারিশকারী মুহাম্মদ (সাঃ) ।
সাহাবাগণ একবার নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ
"হে আল্লাহ্র নবী! আপনার উৎস সম্পর্কে কিছু বলুন।" নবী (সাঃ) জবাব দিয়েছিলেন, "আমি আমার পিতা ইব্রাহিম (আঃ) দু’আ-র ফল এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম এর (আল্লাহ্র পক্ষ থেকে দেয়া) সুসংবাদ । আমার মা স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তার দেহ থেকে একটি আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে যা আলোকিত করেছিল সিরিয়ার দুর্গ পর্যন্ত ।”
আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সেই হেদায়াতের আলো যার শুভ আগমনে দূর হয়েছিল কুফর ও শিরকের সকল অন্ধকার, ইসলামের একত্ববাদে এবং নবীর সুন্নাহ তে আলোকিত হয়েছিল সারা বিশ্ব ।
[1] এটি বর্তমানে কা’বা ঘরের পাশে রক্ষিত আছে ।
*****************************************************
No comments:
Post a Comment