আর আল্লাহ্র জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম । কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক । (আল-আরাফ ৭:১৮০)
আল্লাহ তা'আলার নিরানব্বই নাম আছে (এক কম একশ নাম) । আল্লাহ তা'আলা বেজোড় । তাই তিনি বেজোড়ই পছন্দ করেন । যে ব্যাক্তি এগুলোর হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে । হাদিসটি আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । [ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), ৫৯৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৮৬১ ]
এই নামগুলো মনে
রাখার বিনিময়ে আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দিয়েছেন
!! কত বড় বিনিময় এটা !!! কিন্তু, কতজন আমরা এই
নামগুলো জানি এবং এগুলোর অর্থ জানি ?
এই নামগুলো মনে রাখার সহজ কোন পদ্ধতি কি
আছে? অনলাইনে অফলাইনে অনেক খুজেও আমার কাছে ফলপ্রসূ কোন সহজ নিয়ম চোখে পরেনি ।
অনেকে নামগুলো ভাগ ভাগ করে কবিতার ছন্দে কিংবা নাশিদের সুরে মনে রাখার চেস্টা করেন
। তবে এভাবে সবগুলো নাম একসাথে মনে রাখা আমার কাছে খুব সহজ মনে হয়নি। তাই
নামগুলো সহজে মনে রাখার জন্য আজ একটু ভিন্ন পদ্ধতি কাজে
লাগাবো ইনশা-আল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের মস্তিস্ককে বিপুল তথ্য ধারণ ক্ষমতা দিয়ে তৈরি করেছেন । শুধু একটু সিস্টেমিক ভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে অকল্পনীয় সংখ্যক তথ্য আমরা মনে রাখতে পারি । আর, মাত্র ৯৯টি নাম মনে রাখা তো কঠিন কোন কাজ হওয়ার কথা না। আজ আমরা আল্লাহ্র ৯৯টি নাম মনে রাখার জন্য জনপ্রিয় কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করব ইনশা-আল্লাহ। তথ্য মনে রাখার অনেকগুলো পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে অনেক কার্যকর একটি পদ্ধতি হল ‘মাইন্ট ম্যাপিং’[1] । এর আবিস্কারক টনি বুজান । বর্তমানে এটিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ও কার্যকারী থিংকিং টুল হিসাবে গন্য করা হয় । এটি তথ্যগুলো বড় ছবিসহ বিস্তারিত দেখার চমৎকার এক উপায়। ছবি মানুষের স্মৃতিতে বেশি স্থায়ী হয় । তাই প্রতিটি মাইন্ট ম্যাপ শুরু হয় কেদ্রে একটি ছবি দিয়ে । তারপর এর থেকে শাখা প্রশাখার বিস্তার করে তথ্যগুলো ছবির মাধ্যমে গেঁথে নেয়া হয়। ছবি সাজিয়ে ভাল করে ম্যাপটি আকতে পারলে এখান থেকে একটির পর একটি তথ্য মনে করা যায়; কান টানলে যেমন মাথা আসে তেমনি ভাবে । তবে আল্লাহ্র নাম মনে রাখার ক্ষেত্রে ছবি ব্যবহার করাটা শোভন দেখায় না বলে ছবির পরিবর্তে এখানে বাংলা বর্ণ (নামের প্রথম বর্ণ) ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে আল্লাহ্র সবগুলো নাম বাংলা বর্ণানুক্রমে সাজানো হয়েছে । একই বর্ণের নামগুলো আবার সাজানো হয়েছে কাছাকাছি উচ্চারণ কিংবা শেষ বর্ণ বা শেষ বর্ণের আগের বর্ণের সাথে মিল রেখে [যেমন, আল-মুজীব - আল-মুযিল; আল-আযীম - আল-আযীয]। নামগুলো পরে শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে তিনটি কলামে সাজানো হয়েছে । দ্বিতীয় কলামে যে নামগুলো স্থান দেয়া হয়েছে তা প্রথম কলামের নামের সাথে নিম্নোক্ত ভাবে সম্পর্কিতঃ
১) কাছাকাছি
উচ্চারণঃ যেমন আল-হাদী (হেদায়েত দানকারী, পথ প্রদর্শনকারী)
=> আল-বাদী’ (স্রষ্টা, সূচনাকারী)
২) একই আরবি
মূল থেকে আগতঃ যেমন আল-আযীয (সবচেয়ে সম্মানিত)=> আল-মু’ইয (সম্মান প্রদানকারী)।
সাধারনত এগুলো ‘ম’ বা আরবি ‘মীম’ দিয়ে শুরু হয়। এই নামগুলোর অর্থও প্রায় কাছাকাছি হয়
।
৩) কুরআনে
যে নামগুলো প্রায়ই একসাথে এসেছে । যেমন, আল-হাইয়ু (চিরঞ্জীব, জীবিত) => আল-কাইয়ুম (চিরস্থায়ী, স্বয়ংস্থিতিশীল)
; আল-যা-হির (প্রকাশমান)=> আল-বা-তিন (অপ্রকাশমান) ।
নামের শুরুর
বর্ণগুলো মনে রাখার জন্য আমরা নিচের বাক্যটি মনে রাখতে পারি ।
“আল্লাহ্র জিকিরে খুব মগ্ন, তাওয়াফে, সারাদিন”
এখানে তিনটি ছবিতে সবগুলো নাম দেয়া হলো । এগুলো আমরা মনে গেঁথে নিয়ে খুব সহজেই আল্লাহ্র সবগুলো নাম মনে রাখতে পারবো ইনশা-আল্লাহ। আসুন তাহলে এখনই শুরু করি।
তবে, একটি বিষয় । মনে রাখার পদ্ধতি একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার । একেক জন একেক ভাবে মনে রাখতে পছন্দ করে । তাই এই পদ্ধতি অনেকের ভাল নাও লাগতে পারে। তবে এভাবে নিজের মত করে সাজিয়ে আমরা আল্লাহ্র এই সুন্দর নামগুলো মনে রাখতে পারি ।
পরবর্তী পর্বে আমরা এই মাইন্ট ম্যাপটি আরো বড় করে আল্লাহ্র নামের পাশাপাশি নামের অর্থগুলোও মনে রাখার চেস্টা করবো ইনশা-আল্লাহ ।
মুহাম্মদ মাসউদ
১৯ মার্চ ২০২১